সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বলছে - গুপ্তহত্যা নামে ৮৫ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার,
বিশেষজ্ঞদের মতে - এধরনের হত্যাকান্ড রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা নাগরিকের সাংবিধানিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও দেশের বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে খুন করা I
বেশকিছু দিন থেকে বাংলাদেশে ‘গুপ্তহত্যা’ নামে এক ভয়ানক শব্দ শোনা যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারি বিভিন্ন সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্নজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর খুন করে লাশ ফেলে দেয়া হচ্ছে নির্জন স্থানে, কিংবা গুম করে ফেলা হচ্ছে। এসব হত্যাকান্ডের শিকার অনেকের লাশ পাওয়া যাচ্ছে কারো কারো লাশও মিলছে না। এর দায়দায়িত্বও স্বীকার করছে না কেউই। গুপ্তহত্যার শিকার এসব মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে। কারা কী উদ্দেশ্যে তাদের হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে এবিষয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা র্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরনা দিলেও তাদের সম্পর্কে কোন তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলন করে নানা ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েও তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে এদের প্রায় সকলেই -
গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন। দেশে এখন আরো জীবনই নিরাপদ নয়। কারোরই নিরাপদে বেঁচে থাকার গ্যারান্টিতো নেই-ই বরং মৃত্যুর পরে আত্মীয় স্বজনরা লাশ পাওয়ার নিশ্চয়তাও নেই। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এধরনের ঘটনাগুলোতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং দ্রুত নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার ও গুপ্ত হত্যার বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখা দাবি করেছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, সাদা পোষাকে কাউকে আটক বন্ধ করতে হবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরে গ্রেফতার করতে হবে। গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে আইনী পক্রিয়ায় তাদের শাস্তি দিতে হবে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র আসাক ও অধিকারসহ দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তদন্তে প্রমাণও মিলেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ফিরে আসেনি। গত এক বছরে এধরনে ঠিক কতটি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তার সঠিক কোন হিসাবও পাওয়া যাচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ অনুযায়ী এই সংখ্যা শতাধিক। গত ১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, দেশে এখন গুপ্তহত্যা চলছে। বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম এখনো নিখোঁজ রয়েছে। গত জুন মাস পর্যন্ত এক বছরে কমপক্ষে ৮৪ জন লোক গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন ঘনটার পর্যবেক্ষণে দেখা দেখে গেছে দেশে একের পর এক গুপ্তহত্যা চলছেই। কোনো থানা এলাকায় র্যাবসহ অন্য সংস্থার লোকজন কাউকে আটক করলেও তা সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হচ্ছে না। ফলে কে কাকে আটক করল তা বেমালুম অস্বীকার করার সুযোগ নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। টার্গেটকৃত লোকজনকে সাদা পোশাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; পরিচয়পত্র দেখানোরও প্রয়োজন বোধ করেন না গ্রেফতারকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এধরনের হত্যাকান্ড রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা নাগরিকের সাংবিধানিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি দেশের বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য খুন করা। প্রতিটি গুপ্ত হত্যাই খুনের পর্যায়ে পড়ে। যা দেশে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের অনাস্থাকে আরো প্রকট করে তুলবে এবং তা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য ডেকে আনবে মহাবিপর্যয়।গত ১১ মে আইন ও সালিশ কেন্দ্র দেশব্যাপী গুপ্তহত্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, সম্প্রতি পুলিশ ও র্যাব পরিচয়ে লোকজনকে বাসা ও রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ধরনের গুপ্তহত্যা ফ্যাসিস্ট দেশগুলোতে হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের কর্মকান্ড কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এ ধরনের হত্যা বন্ধে সরকারের কাছে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আহবান জানিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত পুলিশের ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ ধরনের কর্মকান্ডকে ‘গুপ্তহত্যা’ উল্লেখ করে তা অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারাও। তারা বলেছেন, কোনো বাহিনী এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তা তদন্ত করা উচিত। র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার বুধবারকে বলেন, সম্প্রতি এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম জড়িয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ড করা হচ্ছে। আগেও এসব দেখা গিয়েছিল। তবে অপরাধীদের কথা না বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নাম জড়িয়ে এসব বলার ব্যাপারটা উদ্দেশ্যমূলক কিনা তাও দেখার ব্যাপার রয়েছে।ক্রসফায়ার নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো হৈ চৈ করে বলে ক্রসফায়ারের বদলে গুপ্তহত্যাকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লাতিন আমেরিকা, কাশ্মির ও ফিলিপাইনের আদলে বর্তমানে এ দেশেও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড চলছে। কখনো সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর লোক সেজে আবার কখনো র্যাবের পোশাকে কোনো ব্যক্তিকে অপহরণ করা হচ্ছে। লাশও গুম করে ফেলা হচ্ছে। ফলে অপহৃত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। দেশের বিভিন্নস্থানে এখন প্রায়ই রহস্যজনক গুলিবিদ্ধ লাশ মিলছে। পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মৃত্যু সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না। পরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফনও করা হচ্ছে।অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথমদিকে এক স্থান থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র ক্রসফায়ার করে ডাকাতির গল্প প্রচার করতো র্যাব । আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনুসন্ধানে এ ধরনের অনেক ঘটনা ধরা পড়েছে। যা হাইকোর্টে রিট আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এর একটি ঘটনা হলো, ২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার টেপড়া গ্রাম থেকে লোকজনের উপস্থিতিতে আটক করা হয়েছিল নুরুজ্জামান, মোঃ আলম ও বাদশা মিয়াকে। আটকের তিন ঘণ্টা পর সাভারের আমিন বাজার এলাকায় তাদের লাশ পাওয়া যায়। র্যাব-৪-এর পক্ষ থেকে আটকের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তদন্ত করে ক্রসফায়ারের আসল রূপ আদালতে উপস্থাপন করার পরই এ ধরনের গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছে বলেই অনেকে আশঙ্কা করছেন। ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে রাজধানীতেই সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তারা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখেছে। অনেকে আটককৃত ব্যক্তির লাশ ফেরত দেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন করছেনগত ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পাদ গোলাম মুর্তজ কে ধানমন্ডি থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েক ব্যক্তি আটক করেন। তার বন্ধু আবদুল্লাহ সাবিতকে নিয়ে পুরানা পল্টন থেকে মোটরসাইকেলে কলাবাগান যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারা রবীন্দ্র সরোবরে মাগরিবের নামাজ পড়ে। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে ওঠার সময় সাদা পোশাকধারী ৬/৭ জন মুর্তজাকে ঘিরে ধরে। তারা টানাহেঁচড়া করে মুর্তজাকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে। সাবিত ওই ব্যক্তিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসটি আবাহনী মাঠের দিকে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী সাবিত জানান, মুর্তজাকে তুলে নেয়া মাইক্রোবাসের পেছনে ‘ডিবি’ লেখা ছিল। সে গাড়িটির নম্বর দেখার জন্য মোটরসাইকেলে পিছু নেয়। সাবিত পেছনে ছুটতে থাকলে একপর্যায়ে মাইক্রোবাস থামিয়ে অস্ত্রধারী দু’জন লোক ধাওয়া করে সাবিতকে। সাবিত জানায়, ভয়ে সে আর সামনে এগোয়নি। মুর্তজার বড় ভাই প্রভাষক আবু কাউছার মোঃ শামসুজ্জামান জানান, ভাইয়ের সন্ধানে তিনি ঢাকায় আসেন। বিকালে ধানমন্ডি থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করতে গেলে ডিউটি অফিসার জিডি নেয়নি। থানার ওসি টেলিফোনে শামসুজ্জামানকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। তিনি বলেন, ওসি হুমকি দিয়ে বলে ‘তোর ভাই কী করে? তুই কী করোস? শালা তোরা সন্ত্রাসী, শিবির ক্যাডার।’ শামসুজ্জামান আরও বলেন, ওসি জিডি গ্রহণ না করে উল্টো তাকে আটক করার হুমকি দেয়। তিনি একঘণ্টা থানার বারান্দায় ঘুরাঘুরি করেন। পরে আটক হওয়ার ভয়ে থানা থেকে চলে আসেন। তিনি বলেন, আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে কারা অপহরণ করে নিল এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারলাম না। তিনি বলেন, থানায় এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে দিল না পুলিশ। মুর্তুজার পরিবার আদৌ জানেন না সে বেঁচে আছে না গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে রাজশাহীর রাজনীতি মুর্তুজা সমস্যা মনে করেই তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। গত ১৯ জুলাই সকাল থেকেই বাবুবাজার ব্রিজসংলগ্ন বুড়িগঙ্গায় ভাসতে দেখা যায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ। লাশটি উপুর হয়ে ভাসছিল। লাশটি ফুলে ওঠার কারণে তা অনেকটা বিকৃত হয়ে যায়। স্খানীয় সূত্র জানায়, লাশটি ভাসতে দেখে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ দীর্ঘ সময় পরে লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পুলিশ নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানতে পারেনি। তার পরনে রয়েছে প্যান্ট-শার্ট। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর বলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে। এভাবে প্রায়শই বুড়িগঙ্গায় পাওয়া যাচ্ছে অজ্ঞাত লাশ। গুপ্ত হত্যার শিকার হন আওয়ামী তরুণ লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নূরুল আমিন মাকসুদ। গত ১৮ এপ্রিল গাজীপুর থেকে পুলিশ তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। তার পরিবারের অভিযোগ, ১৭ এপ্রিল রাতে র্যাব তাকে অপহরণ করে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। মাকসুদকে অপহরণের সময় তার সঙ্গীয় তরুণ লীগের নেতা মোসলেহউদ্দিন মশু জানিয়েছেন, গ্রেফতারের দুই দিন আগের রাতের বেলায় র্যাডিসন হোটেলের সামনে দুটি সাদা নিসান মাইক্রোবাস তাদের প্রাইভেট কারটির গতিরোধ করে। এ সময় মাইক্রোবাসের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে এবং নিজেদের র্যাবের সদস্য পরিচয় দেয়। অস্ত্রধারীরা তাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে রাস্তায় ফেলে মাকসুদকে নিয়ে চলে যায়।গত ১৪ এপ্রিল কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী সাইদুলকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তার এক নিকটাত্মীয় বলেছেন, পহেলা বৈশাখ রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। তার লাশটিও পাওয়া যায়নি। গত ৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কৃষক আন্দোলনের নেতা সাইফুল্লাহ লঙ্করের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালায়। এরপরই তার লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশে। তার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখমের চিহ্ন ছিল। কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় নেতারা ১৩ ডিসেম্বর যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সরকার ক্রসফায়ারের বিকল্প হিসেবে ‘গুপ্তহত্যা’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেন।গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তুরাগ নদীর তীরে একটি হাউজিংয়ের জমিতে বালু চাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তিনটি লাশ। নিহতদের মধ্যে ঝালকাঠির রাজাপুরের যুবদল নেতা মিজানুর রহমান (৩৭) রয়েছেন। মিজানের স্ত্রী নাসিমা খানম অভিযোগ করেন, গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে তার স্বামীসহ তিনজনকে অপহরণ করা হয়েছিল। অপহরণের দিনই তিনি বাড্ডা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। তাকে র্যাব পরিচয়েই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, গত মার্চ মাসে মিজানকে ধরতে র্যাব নৈকাঠির বাড়িতে হানা দেয়। তবে আগাম খবর পেয়ে মিজান আগেভাগেই সরে পড়ে। তবে র্যাব মিজানের চার সহযোগীকে গ্রেফতার এবং মিজানের জার্মানির তৈরি দুটি অত্যাধুনিক রিভলবার উদ্ধার করে।গত ১৪ এপ্রিল সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ১২-১৪ জন সশস্ত্র ব্যক্তি নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে শহিদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী রানীকে তুলে নিয়ে যায়। নিহত শহীদুল্লাহর স্ত্রী রানী বেগম জানান, পহেলা বৈশাখ সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত পৌনে ১২টায় তারা আমিনবাজার ব্রিজের কাছে এলে সাদা ও লাল রঙের দুটি গাড়ি তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। গাড়ি থেকে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন লোক তাদের দু’জনকে আটক করে নিয়ে যায়। সাভারের গোল্লারপুর তালতলা এলাকায় নিয়ে আটককারীরা নিজেদের র্যাব সদস্য দাবি করে শহীদুল্লাহকে রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন শহীদুল। একটি গাড়িতে র্যাব-৪ লেখা ছিল বলে রানী দাবি করেছেন। কিন্তু গত ২৬ এপ্রিল পল্লবীর প্রিয়াংকা স্যুটিং স্পটে তার লাশ পাওয়া যায়।গত ২৩ ডিসেম্বর খুলনার মংলায় হোটেল পারিজাতের পাশ^বর্তী কাশবনের ভিতর থেকে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের আঞ্চলিক প্রধান শহীদুল ইসলাম শহীদের (৩৮) গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। তার বুকে ৩টি বুলেটবিদ্ধ ছিল। লাশ উদ্ধারের কয়েকদিন আগে সাদাপোষাকের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। গত ২০ নভেম্বর মিরপুরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পুর্ণবাসন সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ রাজুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়। মাগুরা জেলার দোয়ারপাড়ার আব্দুল আজিজ বিশ^াসের পুত্র বাজুর বিরুদ্ধে নগরীর মিরপুরসহ বিভিন্ন থানায় মামলা ছিল। নিহতের আত্মীয়রা জানান, ১৮ নভেম্বর থেকে হঠাৎ নিখোঁজ ছিলেন তিনি। কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে গেছে এবিষয়ে জানা যায়নি। শাহআলী থানা পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন নিহতের মাথায় দু’টি গুলি ছিল। দেখে মনে হয়েছে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা তাকে হত্যা করেছে। নিহতের পরিবার বলছে তিনি গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন। গত ২৭ এপ্রিল মিজানুর রহমান সুমন নামের একজন ব্যবসায়ীকে সাদা পোষাকধারী র্যাব সদস্যরা গাইবান্ধার মহিমগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। সুমনের স্ত্রী সুরভী আক্তার গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে র্যাব কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও সুমনের কোন হদিস পাননি তাঁরা। কাফরুল এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিনড়ব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই তাঁর এই পরিণতি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।গত ১৪ মার্চ রাত ৩টার দিকে রাজধানীর পল্লবীর ১১ নাম্বার সেকশনের বি-ব্লকের ১ নম্বর ওয়াপদা ভবন থেকে দুই ভাই জালাল ও লালবাবুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ র্যাব পরিচয় দিয়েই গ্রফতারের পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি দুই ভাই জালাল ও লালবাবুকে। তাদের ভাই শাহাবুদ্দিন জানান, জালালকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে লালবাবুকেও গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। পরদিন তাদের খোঁজ নিতে র্যাব অফিসে গেলে র্যাব কর্মকর্তারা বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করেন। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাননি পরিবারের সদস্যরা।১৯ মার্চ ২০১০ র্যাব-৫ এর সদস্যরা ঠাকুরগাঁও সালন্দর নওলা পাড়ার চাঁন মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া কাঠ ব্যাবসায়ী মোঃ আকবর আলী সরদার (২৮) এবং একই গ্রামের বিপিন চন্দ্র সরকারকে (৩৬) সালেন্দার বিশ্ব ইসলামী মিশন মসজিদের সামনের রাস্তা থেকে আটক করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০ মার্চ, ২০১০, সকাল ১০.০০টার দিকে বিপিন সরকারকে র্যাব ছেড়ে দিলেও আকবর এরকোন খোঁজ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আকবর এর পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও থানায় সাধারণ ডায়রী (জিডি) বা মামলা করতে চাইলে থানা পুলিশ এর কোনটাই গ্রহণ করেনি। পরে আকবর এর পরিবার ঠাকুরগাঁও এর পুলিশ সুপারের মাধ্যমে র্যাব-৫ এর কাছে আকবরের খোঁজ করলে তাঁরা আকবরের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন।১৮ পরবর্তীতে গত ১৭ মে ২০১০ থেকে আকবরের ভাই আইয়ুব আলী ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার আব্দুর রহমানেরও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার তেরমনি পিরোজপুর গ্রাম থেকে র্যাবের একটি টিম মোঃ সেলিম, মোহাম্মদ আলী ও মইনুল নামে তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলীকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। মইনুলকেও থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেলিমের কোনো খোঁজ পাননি তার পরিবারের সদস্যরা। র্যাব কর্মকর্তারাও তার গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করছেন।গত ১৯ ফেব্র“য়ারি ২০১০ র্যাব সদস্য পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তি গাজীপুরের কাপাসিয়ার ফলবিক্রেতা মোঃ সেলিমকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ র্যাব-৪ এর একটি দল সেলিমকে তাঁর দুই বন্ধু মইনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীসহ গ্রেফতার করে। মইনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতারের বিষয়টি র্যাব-৪ স্বীকার করলেও মোঃ সেলিমের কথা অস্বীকার করে। র্যাব মইনুল ইসলামকে ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদি এলাকার ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় সোপর্দ করে এবং মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এ ঘটনার পর থেকে সেলিম নিখোঁজ রয়েছেন।নারায়ণগঞ্জের তোফাজ্জল বাহিনীর প্রধান তোফাজ্জলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় ২৩ অক্টোবর। তার আত্মীয় স্বজনরা অভিযোগ করেছে ২১ অক্টোবর ঢাকার তাতী বাজারে একটি আবাসিক হোটেল থেকে সাদা পোষাকের ব্যক্তিরা তাকে আটক করে। এরপরই নারায়ণগঞ্জের ঝালকুড়ি এলাকা থেকে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তোফাজ্জলের আত্মীয়দের অভিযোগ তাকে ক্রসফায়ারের মতোই ‘গুপ্তহত্যা’ করা হয়েছে। গত বছরের ১১ মে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে জেলগেটেই অপহরণ করা হয় রাকিবুজ্জামান রাকিবকে। এর আগে হত্যা মামলায় ১০ বছর জেল খেটেছিলেন তিনি। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান ও আইনজীবীর সামনে থেকেই জেলগেটের ভেতর থেকেই সাদা পোশাকধারী একদল লোক রাকিবকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। এর পেছনে র্যাব-১০ লেখা একটি পিকআপও চলে যায়। এ সময় কামরুজ্জামান তাদের পরিচয় জানতে চাইলেও তারা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। পরদিন সকালে ইন্দিরা রোড থেকে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে তেজঁগাও থানা পুলিশ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রে তদন্ত করে এর সত্যতাও পেয়েছে।এদিকে গুপ্তঘাতকের হাতে খুন হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পল্লবীর বাসিন্দা বৃদ্ধা শাহেলা খাতুন তার নাতির খোঁজে মর্গে আসেন। তিনি জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি কে বা কারা তার নাতি জহিরুলকে কালাপানির বস্তি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শাহেলা খাতুনের ভাষ্য, রোববার অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি তাকে জানিয়েছে, জহিরুলকে মেরে ফেলা হয়েছে।যাত্রাবাড়ীর দোলাইরপাড় এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম ভূঁইয়া তার সন্ত্রাসীপুত্র আল-আমিনের খোঁজে কয়েকদিন ধরে মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ এবং নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে ঘুরছেন। ধরনা দিচ্ছেন র্যাব ও পুলিশের কাছে। তার ভাষ্য, তার ছেলেকে ১৪ এপ্রিল দুপুরে বাসার সামনে থেকে একটি মাইক্রোবাসে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আল-আমিন নিখোঁজ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইব্রাহিম ভূঁইয়া জানান, অপহরণকারীদের দেহের গড়ন ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মতো। ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অর্ধডজন মামলা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।সাধারণ পোশাকে বিভিন্ন বাহিনীর নাম করে লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন। লোকজন এখন আর আস্থা পাচ্ছে না। এর আগেও বেশ কিছু স্থানে সাধারণ পোশাকের কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আটকে রেখেছিল স্থানীয় লোকজন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে মারধর করা হচ্ছে। মিরপুরে গ্রেফতার করতে যাওয়া লোকজনের পরিচয় জানতে চাওয়ায় আরেক ভাইকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে গ্রেফতার করতে যাওয়া র্যাবের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ার অপরাধে নিউ এজ-এর একজন সাংবাদিককেও নির্যাতন করেছিল র্যাব। এ পরিস্থিতিতে দাবি উঠেছে, কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন পোশাক পরে যান। অথবা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বা জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গ্রেফতার করেন।ওদিকে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ, র্যাব কার্যালয়, ডিবি কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছে লোকজন। মির্টফোড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিউটি করেন এমন সাংবাদিকরা জাননা, প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলে, স্বামী বা নিকটাত্মীয়ের লাশের সন্ধানে মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আসছেন। নিখোঁজ নিকটাত্মীয়দের খোঁজে ভিড় বাড়ছে র্যাব কার্যালয়, থানা ও ফাঁড়িতে।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের কর্মচারীরা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে লোকজন মর্গে রাখা লাশ দেখে যাচ্ছেন। মর্গের একজন কর্মচারী জানান, গত সপ্তাহে মিরপুর থেকে দুইজন নারী-পুরুষ মর্গে গিয়ে তাদের ভাইয়ের খোঁজ করেন। র্যাবের নাম করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলেও তারা জানিয়েছিলেন। তবে মর্গ থেকে ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে তাদের যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয়, সেখানে খুন হওয়া অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের লাশের ছবি সংরক্ষণ করা হয়। এভাবেই প্রায়শই দেশের বিভিন্ন স্থানে গুপ্তহত্যা বা গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কিভাবে কাদের হাতে তাদের মৃত্যু হচ্ছে এবিষয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা রহস্যজনক নিরবতা পালন করছেন। লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর পর সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সদস্যরা সহজ ভাবে বলছেন, প্রতিপক্ষের হাতে এরা খুন হতে পারে। অধিকাংশ অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হচ্ছে। এসব অপমৃত্যুর মামলা নিয়ে পুলিশ কোন তদন্ত করছে না। দিনের পর দিন এসব মামলা ধামাচাপা পড়ে থাকছে। ফলে তাদের মৃত্যুর রহস্যও থাকছে আড়ালে।সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইন জীবি এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম করে কাউকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া এবং তার লাশ পাওয়া যাওয়া শুধু গভীর উদ্বেগজনক ঘটনাই নয় বরং তা রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা নাগরিকের সাংবিধানিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশে এখন আমি আপনি কারো জীবনই নিরাপদ নয়। এটা আইনের শাসনের প্রতি জনগণের অনাস্থাকে আরো প্রকট করে তুলবে এবং তা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য ডেকে আনবে মহাবিপর্যয়। এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতাও নেই। দেশের মানুষ সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পরিচিত হতে চায়। এটা অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের আইনের ঊর্ধ্বে রাখা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন। আর সে কারণেই সবগুলো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এখনই সব ধরনের হত্যাকান্ড বন্ধ করা উচিত।সুপ্রীম কোর্টের অপর আইনজীবী এডভোকেট সুলতান মাহমুদ বলেন, ফেরআউ নমরুদের মতো জালেম শাসকদের সময়েও কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে একটি প্রহসনমূলক বিচার করা হতো। কিন্তু এই সরকার ফেরাউন নমরুদের চাইতেও ভয়াবহ কাজ করছে। তারা কোন বিচারেরও প্রয়োজন মনে করছে না। যাকে খুশি ধরে নিয়ে হত্যা করছে। এভাবে কোন দেশ চলতে পারে না। এটা দেশের বিচার ব্যবস্থাকেই অস্বীকার করে মানুষ খুন করার শামিল।
লেখকের ই-মেইল : alauddinarif@yahoo.com
No comments:
Post a Comment